উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে নৈতিক সাহিত্য পাঠদান: একটি পর্যালোচনা
DOI:
https://doi.org/10.52805/bjit.v16i26.224Abstract
মাতৃভাষা জ্ঞান মানুষ জন্মগত ভাবেই কিছুটা অর্জন করে। এ জ্ঞানের মাধ্যমেই পরবর্তীতে কোন শিক্ষার্থী জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশের আগ্রহ ও স্বাদ অনুভব করে। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা হওয়ার ফলে আমাদের দেশীয় ছাত্র-ছাত্রীরা সাহিত্য ও নীতি নৈতিকতা সর্ম্পকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উন্নত জ্ঞানার্জন করতে পারছে না। অথচ যেই কোন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দেশপ্রেম, মানব কল্যাণ ও মানবতাবোধ ইত্যাদি বিষয় জানা ও বাস্তব জীবনে অনুসরণ করা রাষ্ট্র ও সমাজের পক্ষ থেকে যেমন দাবি, শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও অন্যতম উদ্দেশ্য। এ কথা স্পষ্ট যে সুসাহিত্য শিক্ষা দানের মাধ্যমে মানুষকে সবচেয়ে বেশি মানবিক ও নীতিবান করা যায়। সুসাহিত্যিকগণ তাঁদের সাহিত্যের মাধ্যমে নীতিবাক্য তোলে ধরার চেষ্টা করেন। সাহিত্যে নীতিজ্ঞান লুকিয়ে থাকে বলেই সাহিত্য অধ্যয়নের মাধ্যমে মানুষের মানবিক চেতনার বিকাশ ঘটে এবং পাঠকের মন কুসংস্কারমুক্ত হয়। নীতি বিষয়টা আলাদা শিক্ষা দিলে পাঠকের হৃদয়ঙ্গম হতে চায় না, সাহিত্যের সাথে শিক্ষা দিলে বিষয়টার পূর্ণতা আসে। সাহিত্য রসের সাথে নীতিটা মিশে থাকে। শুধু সার গোবরে যেমন গাছ বড় হতে পারে না, একে মাটির আশ্রয় নিতে হয়, নীতি বিষয়টাও ঠিক তেমনি। বাংলা সাহিত্যে এমন কিছু মহা পুরুষের জন্ম হয়েছিল যাঁরা আজীবন বাঙালি জাতিকে মানবিক ও নীতি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁদের মধ্যে গিরিশচন্দ্র সেন (১৮৩৪-১৯১০), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১), সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী (১৮৮০-১৯৩১), শেখ আব্দুর রহিম (১৮৫৯-১৯৩১), বেগম রোকেয়া (১৮৮০-১৯৩২), শেখ ফজলুল করিম (১৮৮২-১৯৩৬), ডা: মোহাম্মদ লুৎফর রহমান (১৮৮৯-১৯৩৭), এয়াকুব আলী চৌধুরী (১৮৮৬-১৯৩৮), কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ (১৮৬০-১৯৪০), খান বাহাদুর আহছানউল্লা (১৮৭৩-১৯৬৫), ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ (১৮৮৫-১৯৬৯), মো: বরকতুল্লাহ (১৮৯৮-১৯৭৪), মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক (১৮৮৩-১৯৭৬), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৮-১৯৭৬), প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ (১৮৯৪-১৯৭৮) সহ আরও অনেক কবি ও সাহিত্যিক রয়েছেন। তাঁদের লেখা সমগ্র থেকে নীতি জ্ঞান সম্পর্কিত বাছাই করা কিছু প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা ও উপন্যাস এর সমন্বয়ে কিছু কোর্স বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষার্থীদের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করলে বাংলা সাহিত্য ও নীতিজ্ঞান দুটো বিষয়েই জাতি সমৃদ্ধ হতো এবং জাতি হিসাবে আমাদের দেশপ্রেম, মানবতাবোধ ও ভাষাজ্ঞান অনেক বেড়ে যেত। কর্মজীবনে নীতি-নৈতিকতা সামনে রেখে চললে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে অপরাধ প্রবণতা কমে যায় এবং সুন্দর সমাজ জীবন গড়ে ওঠে। উল্লেখিত বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করাই এ প্রবন্ধের উদ্দেশ্য।